পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের নাম কি

সাপ কেন বিষাক্ত হয়, তা বোঝার জন্য আমাদের প্রকৃতির বিবর্তন প্রক্রিয়ার দিকে তাকাতে হবে। সাপের বিষ তাদের শিকার ধরতে এবং শিকারিদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বিষ সাপের লালাতে একটি জটিল রাসায়নিক মিশ্রণ যা নিউরোটক্সিন, হেমোটক্সিন, এবং অন্যান্য প্রোটিনাসেসের সংমিশ্রণে তৈরি হয়।

এটি সাপকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে শিকার ধরতে সাহায্য করে, বিশেষত যখন শিকার দ্রুত বা আক্রমণাত্মক হয়। এছাড়া, সাপের বিষ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করে। সাপের বিষের বিবর্তন তাদের টিকে থাকার কৌশলগুলির মধ্যে একটি প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের নাম কি?

পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ হল ইনল্যান্ড তাইপান (Inland Taipan)। এটি "ফিয়ারস স্নেক" নামেও পরিচিত। ইনল্যান্ড তাইপান অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সাপ এবং এর বিষ পৃথিবীর সকল সাপের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এর একবারের কামড়ে প্রায় ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অথবা ২৫০,০০০ এর বেশি ইঁদুরকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে।

ইনল্যান্ড তাইপানের বিষে নিউরোটক্সিন, প্রোটিনাসেস, এবং হেমোটক্সিন রয়েছে, যা দ্রুত রক্তের জমাট বাঁধা শুরু করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। যদিও এই সাপ অত্যন্ত বিষধর, এটি স্বাভাবিকভাবে মানুষের সংস্পর্শে আসে না এবং বেশ লাজুক প্রকৃতির। তাই এর কামড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল।
এছাড়াও, কিছু অন্যান্য বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে:
  • কিং কোবরা (King Cobra): বিশ্বের দীর্ঘতম বিষধর সাপ।
  • ব্ল্যাক মাম্বা (Black Mamba): দ্রুততম এবং আক্রমণাত্মক সাপগুলির মধ্যে একটি।
  • বেলচের’স সি স্নেক (Belcher's Sea Snake): একটি বিষাক্ত সামুদ্রিক সাপ।
এই সাপগুলি বিষের প্রভাব এবং তীব্রতার জন্য পরিচিত। তবে ইনল্যান্ড তাইপানকে সবচেয়ে বিষধর হিসেবে ধরা হয়।

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ কোনটি?

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ হল গ্রিন এনাকোন্ডা (Green Anaconda)। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Eunectes murinus। গ্রিন এনাকোন্ডা দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন এবং ওরিনোকো নদী অঞ্চলে পাওয়া যায়। এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ ফুট (৯ মিটার) এবং ওজনে ৫৫০ পাউন্ড (২৫০ কেজি) পর্যন্ত হতে পারে।
এনাকোন্ডা মূলত অর্ধ-জলজ প্রাণী এবং এটি প্রধানত নদী, জলাভূমি এবং অন্যান্য জলাশয়ে বসবাস করে। এদের খাদ্য তালিকায় বড় বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং জলজ প্রাণী অন্তর্ভুক্ত।

তবে, দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সাপ হল রেটিকুলেটেড পাইথন (Reticulated Python)। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Python reticulatus। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায় এবং এদের দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট (১০ মিটার) পর্যন্ত হতে পারে।
গ্রিন এনাকোন্ডা এবং রেটিকুলেটেড পাইথন উভয়ই বিশ্বের বৃহত্তম সাপ হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু ওজন এবং দৈর্ঘ্য অনুসারে তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

পৃথিবীতে কত ধরনের সাপ আছে?

পৃথিবীতে প্রায় ৩,৭৮৯ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এই সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে কারণ নতুন প্রজাতির আবিষ্কার হয় এবং বিজ্ঞানীরা তাদের শ্রেণীবিভাগ আপডেট করেন। সাপদের এই বৈচিত্র্য প্রায় সব মহাদেশে পাওয়া যায়, তবে তারা অ্যান্টার্কটিকা এবং কিছু নির্দিষ্ট দ্বীপে অনুপস্থিত।
সাপদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বিষধর এবং অ-বিষধর সাপ। বেশিরভাগ প্রজাতির সাপ অ-বিষধর হলেও কিছু প্রজাতি অত্যন্ত বিষধর। এদের আবাসস্থল, আকার, এবং খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
এই ব্যাপক বৈচিত্র্য সাপদের বিভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে এবং বিবর্তিত হতে সাহায্য করেছে।

সবচেয়ে বড় পাইথন কোনটি?

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাইথন হল রেটিকুলেটেড পাইথন (Reticulated Python)। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Python reticulatus। রেটিকুলেটেড পাইথন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায় এবং এটি তার দৈর্ঘ্য এবং শক্তিশালী শরীরের জন্য পরিচিত।
রেটিকুলেটেড পাইথনের কিছু বৈশিষ্ট্য:
  1. দৈর্ঘ্য: রেটিকুলেটেড পাইথন সাধারণত ২০-২৫ ফুট (৬-৭.৬ মিটার) লম্বা হয়। কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে এদের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট (৯ মিটার) এরও বেশি হতে পারে।
  2. ওজন: এরা প্রায় ৩৫০ পাউন্ড (১৫৮ কেজি) পর্যন্ত ওজনের হতে পারে।
  3. আবাসস্থল: এরা প্রধানত বনাঞ্চল, জলাভূমি, এবং নদীর আশেপাশে বাস করে।
  4. খাদ্যাভ্যাস: এরা বড় বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং কখনও কখনও সরীসৃপও খায়।
রেটিকুলেটেড পাইথনের দৈর্ঘ্য এবং শক্তিশালী গঠন তাদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সাপ এবং সবচেয়ে দীর্ঘ পাইথন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের সব থেকে বিষাক্ত সাপ কোনটি?

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ হল বেঙ্গল ক্রাইস্টেড সাপ (Bengal Krait)। এটি একটি খুবই মারাত্মক বিষাক্ত সাপ হিসাবে পরিচিত এবং এর মোতাবেক হতে পারে অনেক মৃত্যুর কারণ। বেঙ্গল ক্রাইস্টেড সাপের বিশেষ চিহ্ন হল এর শরীরের সাদা রঙের ক্রাইস্টময় পাতাগুলি এবং গায়ের আড়ালে কালো রঙের পাটার রেখা। এই সাপের মধ্যে বেশিরভাগ অপসারণ মানা হয়ে থাকে কিন্তু তার উগ্রতা এবং বিষাক্ততার দিক থেকে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচে কোন সাপ?

বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী সাপ হলো পাইথন। এই সাপটি প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এর দীর্ঘজীবন কারণ হলো তার প্রাণীসম্পর্কিত লাইফস্টাইল, যা অন্যান্য সাপগুলির তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। পাইথনরা বড় ও স্থূলাকার হয়ে থাকে, এবং তাদের খাদ্যের পদ্ধতি ও ব্যবস্থিত প্রজনন প্রক্রিয়া তাদের কে লম্বা জীবনের মাধ্যমে বাঁচাতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশে কত ধরনের সাপ আছে?

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়। প্রধানত নিম্নলিখিত ধরনের সাপ রয়েছে:

  1. সাফটশেল সাপ: যাদের শরীরের মৌলিক গঠন বাড়তে পারে। এগুলি মধ্যে রেডিয়াসি, টিলাপিয়া এবং শঙ্খিনী সাপ প্রমুখ।
  2. কবরা বা মেরুডিয়াইন সাপ: যাদের শরীরের গঠন সঠিক এবং বাড়ানো হয়।
  3. হাইব্রিড সাপ: যারা মানুষের সঙ্গে বাস করতে পারে এবং বাংলাদেশে হলে সাংবাদিক বলে

রাসেল ভাইপার সাপ

রাসেল ভাইপার বা রাসেল ভাইপার সাপ (Russell's Viper) একটি বিশাল এবং মাধ্যমিক আকারের ভেনমসকার সাপ যা ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মায়ানমার এবং অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলিতে পাওয়া যায়। এই সাপের মাথার মধ্যে একটি তীব্র নোক রয়েছে এবং তারা সাধারণত ভূমি এলাকার কাছাকাছি থাকে।

রাসেল ভাইপার সাপের গভীর হওয়া মশার লবণমুক্ত জহর রয়েছে, যা তাদের মুখ দিয়ে হলুদ লেকের মতো বের হয়। এই জহর তীব্র প্রতিক্রিয়া উত্পাদনের জন্য পরিচিত এবং এটি মানব জন্য মারাত্মক একটি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। রাসেল ভাইপার সাপের বিশেষ চিহ্ন হল পাথরের মতো নোক এবং চারটির মতো মাথার কেঁচো নোংরা।
এই সাপ সাধারণত কৃষিবাসিন্দার অথবা মানবসমাজের নিকটবর্তী এলাকায় থাকে এবং সাধারণত রোডে অথবা খাসগুড়ির মতো পরিচিত অবস্থানে মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকির মাত্রা সৃষ্টি করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
কমেন্ট করুন

এ. আর. মুক্তির আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;

comment url