কুষ্টিয়া জেলার ভৌতিক গল্প
.
কুষ্টিয়া জেলার ভৌতিক গল্প ১
কুষ্টিয়া জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে, যার নাম ছিল ভাটপাড়া, সেখানে প্রায়ই অদ্ভুত এবং ভৌতিক ঘটনা ঘটতো। গ্রামের মানুষরা বিশ্বাস করতেন যে, তাদের গ্রামের কাছে একটি পুরানো পুকুর আছে যেখানে জিনের বাস। সেই পুকুরের নাম ছিল "জিনের পুকুর"। গ্রামের বয়স্করা বলতেন, রাতে সেই পুকুরের কাছে গেলে কেউই আর ফিরে আসে না।
একবার, গ্রামের একজন যুবক, রাহিম, এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করতেন না। তিনি সবসময় বলতেন, "এইসব শুধু ভয় দেখানোর গল্প। আমি দেখাবো যে, এসব কিছুই নয়।" রাহিম ঠিক করলেন, তিনি এক রাত পুকুরের ধারে গিয়ে সবকিছু খতিয়ে দেখবেন।
এক রাতে, পূর্ণিমার আলোতে, রাহিম পুকুরের ধারে গেলেন। পুকুরটি ছিল অদ্ভুত নির্জন, আর তার চারপাশে ঘন গাছপালা ছিল। রাহিম কিছুক্ষণ চারপাশে তাকালেন, কিন্তু কিছু অস্বাভাবিক দেখতে পেলেন না। তিনি ভাবলেন, "দেখলাম তো, কিছুই নেই।"
হঠাৎ করে পুকুরের পানিতে অদ্ভুত ঢেউ ওঠা শুরু হলো। রাহিম প্রথমে কিছু বুঝতে পারলেন না। তিনি আরও কাছে গিয়ে দেখলেন, পানির ভেতর থেকে একটি ছায়া উঠে আসছে। ছায়াটি ধীরে ধীরে একটি মানুষের আকৃতি ধারণ করল, যার চোখ ছিল উজ্জ্বল লাল, আর মুখে ছিল এক ভয়ানক হাসি।
রাহিম ভয় পেয়ে গেলেন, কিন্তু তার পা যেন মাটিতে আটকে গেল। ছায়াটি বলল, "তুমি এখানে কেন এসেছ?" রাহিম কাঁপতে কাঁপতে বললেন, "আমি জানতাম না এখানে কিছু আছে। আমি শুধু দেখতে এসেছিলাম।" ছায়াটি হেসে বলল, "তুমি আমার ঘুম ভাঙিয়েছ, তাই এখন তোমাকে এর শাস্তি ভোগ করতে হবে।"
ছায়াটি ধীরে ধীরে রাহিমের দিকে এগিয়ে এলো। রাহিম চিৎকার করতে লাগলেন, কিন্তু তার কণ্ঠস্বর কেউ শুনতে পেল না। ছায়াটি রাহিমকে পুকুরের পানিতে টেনে নিয়ে গেল। রাহিমের চিৎকার পুকুরের ধারে প্রতিধ্বনিত হলো, কিন্তু তার পর থেকেই সবকিছু শান্ত হয়ে গেল।
পরের দিন সকালে, গ্রামের লোকেরা রাহিমকে খুঁজতে গিয়ে পুকুরের ধারে তার একটি জুতো পেল। তারা বুঝতে পারলেন যে, রাহিম সেই ভয়ানক জিনের শিকার হয়েছেন। গ্রামের সবাই আরও সতর্ক হয়ে গেল এবং কেউই আর পুকুরের ধারে যেতে সাহস করলো না।
গ্রামবাসীরা হুজুরের কাছে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিলেন। হুজুর তাদের বললেন, "এটি একটি পুরনো জিনের অভিশাপ। আমি এখানে কোরআন পাঠ করব এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব যাতে এই পুকুর থেকে জিনের অভিশাপ দূর হয়।"
হুজুর পুকুরের ধারে গিয়ে কোরআনের আয়াত পাঠ করলেন এবং দোয়া করলেন। কয়েকদিন পর, পুকুরের পানির রঙ পরিবর্তিত হয়ে স্বাভাবিক হলো এবং আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো না। তবে গ্রামের লোকেরা এখনও সেই পুকুরের ধারে যেতে ভয় পান এবং তারা বলাবলি করেন, "রাহিমের আত্মা হয়তো সেই পুকুরে আছে। আমরা আর কখনো সেই পুকুরের কাছে যাব না।"
এই ঘটনা কুষ্টিয়া জেলার ভাটপাড়া গ্রামের মানুষের মধ্যে একটি সতর্কবাণী হিসেবে থেকে গেল, এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত এই কাহিনী প্রচলিত থাকল।
কুষ্টিয়া জেলার ভৌতিক গল্প ২
কুষ্টিয়া জেলার সাঁওতা গ্রাম ছিল একসময় শান্ত ও নিরিবিলি, কিন্তু গ্রামের মানুষের মধ্যে সবসময় একটি অজানা আতঙ্ক বিরাজ করত। গ্রামের প্রবীণরা বলতেন যে, গ্রামের পাশের পুরনো বটগাছটির নিচে একটি ভয়ানক জিনের বসবাস রয়েছে। দিনের বেলা বটগাছটি দেখতে সাধারণ মনে হলেও, রাত নামতেই এটি হয়ে উঠতো ভৌতিক এবং ভীতিকর।
গ্রামের তরুণ যুবক, রিয়াজ, এইসব কথায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি সবসময় বলতেন, "এইসব শুধু গল্প, কোনো জিন-টিন নেই।" একদিন রিয়াজ তার বন্ধুদের চ্যালেঞ্জ করলেন এবং বললেন, "আমি প্রমাণ করে দেবো, এসব কিছুই নয়। আমি আজ রাতে বটগাছের নিচে গিয়ে দেখবো।"
সেই রাতে, রিয়াজ একাই বটগাছের দিকে যাত্রা করলেন। রাত তখন গভীর, চারদিকে পিনপতন নিস্তব্ধতা। তিনি বটগাছের কাছে পৌঁছে দেখলেন গাছটির ডালপালা ভয়ঙ্কর ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে, যেন অন্ধকারের মধ্যে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ সাহস হারালেন না, গাছটির নিচে গিয়ে দাঁড়ালেন।
হঠাৎ করেই একটি ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল, আর রিয়াজের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল। তিনি পেছনে তাকাতেই দেখলেন, একটি অদ্ভুত ছায়া গাছের ডালের নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে। ছায়াটি ধীরে ধীরে রিয়াজের দিকে এগিয়ে আসতে থাকল। রিয়াজ ভয় পেয়ে চিৎকার করলেন, কিন্তু তার কণ্ঠস্বর কেমন যেন আটকে গেল।
ছায়াটি একসময় সম্পূর্ণ আকার ধারণ করল, এবং রিয়াজ দেখতে পেলেন, এটি একটি বিশাল কালো জিন, যার চোখ দুটি ছিল রক্তের মতো লাল। জিনটি বলল, "তুমি এখানে কেন এসেছ? তুমি কি জানো না, এখানে আসা নিষিদ্ধ?"
রিয়াজ কাঁপতে কাঁপতে বললেন, "আমি বিশ্বাস করতাম না এসব গল্প। আমি জানতে এসেছিলাম সত্যি কি না।" জিনটি হেসে উঠল, তার হাসি ভয়ঙ্কর এবং ভয়ানক। সে বলল, "তুমি আমার বিশ্রামে বিঘ্ন ঘটিয়েছ, তোমার এর শাস্তি পেতে হবে।"
জিনটি রিয়াজের দিকে এগিয়ে এলো এবং তার হাত উঠিয়ে বলল, "তুমি এখান থেকে কখনোই ফিরে যেতে পারবে না।" রিয়াজ দৌড়াতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তার পা যেন ভারী হয়ে গেল। জিনটি তাকে মাটিতে ফেলল এবং তার শরীরের উপর নিজের ছায়া ছড়িয়ে দিল। রিয়াজ অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
পরের দিন সকালে, রিয়াজকে গ্রামবাসীরা বটগাছের নিচে অজ্ঞান অবস্থায় পেলেন। তার শরীর শীতল হয়ে গিয়েছিল এবং তার চোখ দুটি অদ্ভুতভাবে লাল হয়ে ছিল। গ্রামবাসীরা তাকে হুজুরের কাছে নিয়ে গেলেন। হুজুর তাকে দেখে বললেন, "রিয়াজ একটি ভয়ানক জিনের শিকার হয়েছেন। আমাদের আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে এবং কোরআনের আয়াত পাঠ করে তাকে মুক্ত করতে হবে।"
হুজুর কয়েকজন মুরুব্বীকে সাথে নিয়ে বটগাছের নিচে গিয়ে কোরআনের আয়াত পাঠ করতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে রিয়াজের শরীর থেকে কালো ছায়া সরে যেতে লাগল। রিয়াজের চোখের লালভাবও কমতে লাগল। কিছুক্ষণ পর, রিয়াজ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন।
গ্রামবাসীরা বুঝতে পারলেন যে, সেই পুরনো বটগাছের নিচে সত্যিই একটি জিনের বসবাস ছিল। তারা এরপর থেকে সেই জায়গায় আর কখনো যেতেন না এবং হুজুরের নির্দেশ মেনে চলতেন। তারা বলাবলি করতেন, "জিনের সাথে খেলতে যেও না। তার শক্তি এবং ক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।"
সাঁওতা গ্রামের এই ভৌতিক কাহিনীটি গ্রামবাসীদের মনে একটি গভীর শিক্ষা দিয়ে গেল এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত এই কাহিনী প্রচলিত থাকল।
কুষ্টিয়া জেলার ভৌতিক গল্প ৩
কুষ্টিয়া জেলার এক ছোট্ট গ্রাম ছিল যেখানে মানুষের জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সরল এবং শান্তিপূর্ণ। গ্রামের নাম ছিল মিরপুর। কিন্তু গ্রামবাসীদের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন একদিন হঠাৎ করেই বদলে গেল, যখন একটি পুরনো, পরিত্যক্ত বাড়ি নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করল।
বাড়িটি ছিল গ্রামের একেবারে শেষে, এবং অনেক বছর ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। গ্রামের প্রবীণরা বলতেন যে, বাড়িটিতে একসময় এক ধনী জমিদার থাকতেন, যার নাম ছিল রমিজ উদ্দিন। তিনি অত্যন্ত কঠোর ও নিষ্ঠুর ব্যক্তি ছিলেন, এবং লোকজন বলত, তার মৃত্যুর পর তার আত্মা শান্তি পায়নি।
একদিন, গ্রামের কয়েকজন যুবক সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা এই পুরনো বাড়িটি দেখতে যাবে এবং গুজবের সত্যতা যাচাই করবে। তাদের মধ্যে সাহসী যুবক, ফারুক, এই অভিযানের নেতৃত্ব দিল। তারা সবাই মিলে সন্ধ্যার পর বাড়িটির দিকে যাত্রা করল।
আরো পড়ুন: গল্প
পুরনো বাড়িটি ছিল ভগ্নপ্রায়, আর এর চারপাশে ঘন ঝোপঝাড় ও লতাপাতা দিয়ে ঢাকা ছিল। যুবকেরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল এবং দেখল, ঘরের দেয়ালে অদ্ভুত সব চিহ্ন আঁকা ছিল। বাতাসে যেন একধরনের শীতলতা বিরাজ করছিল, যা তাদের মেরুদণ্ডে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিচ্ছিল।
হঠাৎ করে তারা একটি ঘর থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেল। ফারুক সাহস করে ঘরের দরজা খুলল এবং দেখতে পেল, একটি অদ্ভুত ছায়ামূর্তি কোণে দাঁড়িয়ে আছে। ছায়াটি ধীরে ধীরে তাদের দিকে ঘুরে তাকাল, আর তার চোখ দুটি ছিল রক্তের মতো লাল। যুবকেরা ভয়ে পিছু হটল, কিন্তু ফারুক সাহস করে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কে? এখানে কি করছ?"
ছায়ামূর্তিটি বলল, "আমি রমিজ উদ্দিন। আমি শান্তি পাইনি। আমার মৃত্যুর পর আমার আত্মা এই বাড়িতে আটকে আছে। আমি মুক্তি চাই, কিন্তু কেউ আমার মুক্তি দিতে আসেনি।"
যুবকেরা বুঝতে পারল যে, রমিজ উদ্দিনের আত্মা মুক্তি চায়। তারা গ্রামে ফিরে গিয়ে হুজুরের কাছে সবকিছু বর্ণনা করল। হুজুর বললেন, "আমরা সবাই মিলে কোরআনের আয়াত পাঠ করব এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব, যাতে রমিজ উদ্দিনের আত্মা মুক্তি পায়।"
পরের দিন সকালে, হুজুর ও গ্রামবাসীরা মিলে সেই পুরনো বাড়িতে গেলেন এবং কোরআনের আয়াত পাঠ করতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরের শীতলতা কমতে লাগল, আর রমিজ উদ্দিনের ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগল। হুজুর বললেন, "আল্লাহর রহমতে, রমিজ উদ্দিনের আত্মা এখন মুক্তি পেয়েছে। সে এখন শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারবে।"
গ্রামবাসীরা এরপর থেকে সেই পুরনো বাড়ি আর পরিত্যক্ত রাখতে চাইলো না। তারা বাড়িটি সংস্কার করে একটি মসজিদ তৈরি করল, যেখানে সবাই নামাজ পড়তে যেত।
এই ঘটনা মিরপুর গ্রামের মানুষের জীবনে একটি গভীর প্রভাব ফেলে এবং তারা বুঝতে পারল যে, আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা ও দোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভৌতিক কাহিনীটি গ্রামে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত প্রচলিত থাকল এবং সবাই বলাবলি করত, "আল্লাহর দোয়া ও কোরআনের আয়াতের শক্তির সামনে কোনো অশুভ শক্তি দাঁড়াতে পারে না।"
এ. আর. মুক্তির আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;
comment url